নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত এক ধরণের ব্যাধি যা ঘুমের মধ্যে আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে দেয়; চিকিৎসা সময়মত না করলে স্লিপ অ্যাপনিয়া যেভাবে মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এটা দু’টা কারণে হতে পারেঃ শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে যাওয়া (অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া) অথবা আপনার মস্তিষ্ক সঠিকভাবে আপনার শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না (সেন্ট্রাল অ্যাপনিয়া)। আপনার মস্তিষ্ক তখন আপনাকে জাগিয়ে তুলে যাতে আপনি শ্বাস নিতে পারেন। ফলে বারবার ঘুমের ব্যাঘাত হয়। বারবার ঘুমের এই ব্যাঘাতের ফলে হৃদযন্ত্রের উপর চাপ পড়ে। এই অবস্থা বহুদিন চলতে থাকলে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে এবং মৃত্যুও ঘটাতে পারে। কিন্তু সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করা যায়।
নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত কাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ?
স্লিপ অ্যাপনিয়া শিশু ও টিনএজার থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক, যে কারও হতে পারে।
অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া যাদের ক্ষেত্রে খুব সাধারণ
- পুরুষদের ক্ষেত্রে এটা ৫০ বছর বয়সের আগে সাধারণ এবং মহলাদের ক্ষেত্রে এটা সাধারণ ৫০ বছর বয়সের পরে।
- বয়স বাড়ার সাথে সাথে এটা যে কারও হতে পারে।
- অতিরিক্ত ওজন স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া যাদের ক্ষেত্রে সাধারণ
- যারা ব্যথানাশক ঔষধ (পেইনকিলার) সেবন করেন।
- যাদের বয়স ৬০ এর উপরে।
- যাদের আট্রিয়াল ফিব্রিলেশন আছে।
- যারা উচ্চ স্থানে বাস করেন।
নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত কতখানি সাধারণ?
বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্বের ৫% থেকে ১০% মানুষ স্লিপ অ্যাপনিয়া আক্রান্ত।
স্লিপ অ্যাপনিয়া কিভাবে বুঝবেন?
- সারা রাত ঘুমানোর পর সকালে উঠেও ক্লান্তি
- দিনের বেলা ঘুম ঘুম ভাব
- নাক ডাকা। তবে স্লিপ অ্যাপনিয়া না থাকলেও নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে
- ডিপ্রেশন এবং উদ্বেগ স্লিপ অ্যাপনিয়ার সাধারণ উপসর্গ
- স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, কোন কাজে মনোযোগ দিতে না পারা
- গভীর রাতে বারবার ঘুম থেকে জেগে উঠা
- আপনার পতি/পত্নী কেউ যদি দেখেন যে ঘুমের মধ্যে আপনার শ্বাসপ্রশ্বাস হঠাৎ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে
- শ্বাসপ্রশ্বাসের ধরণ অস্বাভাবিক। স্বাসপ্রশ্বাস খুব দ্রুত হয়ে ধীর হয়ে যাচ্ছে, তারপর কয়েক সেকেন্ডের জন্য শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আবার শুরু হচ্ছে।
- নিদ্রাহীনতা
- রাতে ঘাম এবং অস্থিরতা
- যৌন অক্ষমতা
- শ্বাসকষ্টের কারণে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া এবং দম বন্ধ হয়ে আসছে মনে হওয়া
- ঘুম থেকে উঠার পর মাথা ব্যথা

যেসব কারণে স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়
অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া
- অতিরিক্ত ওজন
- যাদের ঘাড় মোটা
- শ্বাসনালী সরু। এটা হতে পারে টনসিলের কারণে।
- নারীদের তুলনায় পুরুষদের স্লিপ অ্যাপনিয়া হওয়ার সম্ভাবণা ৩ থেকে ৪ গুণ বেশী
- বার্ধক্য
- পরিবারে কারও স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলে
- মদ্যপাণ বা সিডেটিভ সেবন করা
- ধূমপান
- নাক বন্ধ হয়ে থাকা
- উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট ফেইলিওর, টাইপ ২ ডায়াবেটিস স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়
সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া
- বয়স্ক মানুষ
- পুরুষ
- হৃদরোগ
- পেইনকিলার সেবন করা
- স্ট্রোক
নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত-এর চিকিৎসা
স্লিপ অ্যাপনিয়ার সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা হচ্ছে সিপ্যাপ মেশিন (Continuous Positive Airway Pressure CPAP)।
সিপ্যাপ মেশিন একজন ঘুমন্ত মানুষের নাক ও মুখে ক্রমাগত স্থিরভাবে বাতাস সরবরাহ করে। এর ফলে শাসনালী খোলা থাকে এবং শ্বাস নেয়া আরামদায়ক হয়।
কিন্তু জটিল স্লিপ অ্যাপনিয়া যেহেতু শরীরের অন্যান্য অনেক গুরুতর সমস্যা থেকে হয়, তাই এর চিকিৎসা আজীবন চালাতে হতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
প্রতিরোধ
চিকিৎসকরা মনে করেন যে সতর্ক থাকলে এই রোগ এড়ানো সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে কিছু ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়ে তাকেন তারা।
প্রথমতঃ, শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
আর তৃতীয়তঃ, সুষম খাদ্যাভাস করতে হবে।
এছাড়া ঘুমের মধ্যে বার বার দম বন্ধ হয়ে এলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে ভাল থাকা সম্ভব বলে। না হলে স্লিপ অ্যাপনিয়া মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
উপসংহার
নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত বা স্লিপ অ্যাপনিয়া একটি নীরব কিন্তু বিপজ্জনক ব্যাধি, যা সময়মতো চিকিৎসা না পেলে হৃদরোগ, স্ট্রোক এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। নিয়মিত ঘুমের ব্যাঘাত, নাক ডাকা, ক্লান্তি বা ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হওয়া এই রোগের প্রধান লক্ষণ। তাই এসব উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এই রোগ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
Sources:
Mayo Clinic [https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/sleep-apnea/symptoms-causes/syc-20377631]
NIH [https://www.nhlbi.nih.gov/health/sleep-apnea]
Cleveland Clinic [https://my.clevelandclinic.org/health/diseases/8718-sleep-apnea]








