Home দীর্ঘায়ু মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এক মানুষ জীবন ফিরে পেল পাহাড়ে ফিরে: স্তামাতিস ও ক্যান্সার...

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এক মানুষ জীবন ফিরে পেল পাহাড়ে ফিরে: স্তামাতিস ও ক্যান্সার জয়ের ব্লু জোন রহস্য

18
0
স্তামাতিস ও ক্যান্সার জয়ের ব্লু জোন রহস্য
ইকারিয়া, গ্রিস

স্তামাতিস ও ক্যান্সার জয়ের ব্লু জোন রহস্য প্রমাণ করে, প্রকৃতি, ভালোবাসা আর সহজ জীবনধারা কখনো কখনো ওষুধের চেয়েও শক্তিশালী।

 

ইউএসএ-এর চিকিৎসকেরা যখন বললেন,

“তোমার আর মাত্র ৯ মাস বাকি,”

তখন স্তামাতিস মোরিয়াতিস (Stamatis Moraitis) চুপচাপ একটা সিদ্ধান্ত নিলেন – তিনি মরবেন না, বরং বেঁচে থাকবেন। এই গল্পটা কোনও অলৌকিক গল্প নয়, বরং প্রকৃতি, পরিবার, ভালোবাসা আর জীবনের সহজ গতিতে ফিরে যাওয়ার এক অবিশ্বাস্য সত্য কাহিনি।

এই মানুষটির জন্ম হয়েছিল গ্রিসের একটি ছোট দ্বীপে – ইকারিয়া (Ikaria)। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন, এবং পরে ফ্লোরিডায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

মৃত্যুদণ্ডের রায়

প্রায় ৬৬ বছর বয়সে, তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গেল, তিনি লাং ক্যান্সারে আক্রান্ত, এবং তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন – তার হাতে সময় মাত্র ৯ মাস।

স্তামাতিস তিনটি ভিন্ন চিকিৎসকের পরামর্শ নেন, এবং প্রত্যেকেই একই কথা বলেন – কিমোথেরাপি করলেও হয়তো সময় খুব একটা বাড়বে না।

🧳 ঘরে ফিরে চললাম

মরার জন্য নয় – বাঁচার জন্য তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজের শিকড়ে ফিরে যাওয়ার। তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ইকারিয়ায় ফিরে আসেন, মা-বাবার পুরনো পাথরের বাড়িতে ওঠেন, এবং ভাবলেন, এখানেই মাটি ছুঁয়ে বিদায় নেবেন শান্তভাবে।

কিন্তু যা ঘটল, তা তার কল্পনারও বাইরে।

🌿 প্রকৃতি যখন ওষুধ

ইকারিয়া কোনো সাধারণ জায়গা নয়। এটি বিশ্বের কয়েকটি ব্লু জোন (Blue Zones)-এর একটি, যেখানে মানুষ স্বাভাবিকভাবে ৯০-১০০ বছর বয়স পর্যন্ত সুস্থভাবে বেঁচে থাকে।

স্তামাতিস দিনের বেলা বাগান করতেন। নিজের হাতে ফল, শাকসবজি ফলাতেন। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে দুপুরে আঙুরের ওয়াইন পান করতেন, রোদে পিঠ দিয়ে ঘুমাতেন, হাঁটতে বের হতেন।

তিনি কখনো কেমোথেরাপি নেননি। ওষুধ খাননি। কোনো বিশেষ চিকিৎসাও নয়। শুধু ভালোবাসা, প্রকৃতি, ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার আর সামাজিক বন্ধনের শক্তিকে বেছে নিয়েছিলেন।

⏳ সময় এগোয়, মৃত্যুর সময় আসে না!

মাস কেটে যায়। এরপর বছর। তিনি বুঝতে পারেন – তার শ্বাসকষ্ট নেই, কাশি নেই, তিনি বেঁচে আছেন – সুস্থভাবে।

একসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে নিজের চিকিৎসকদের খুঁজতে যান, কারণ তাদের ধন্যবাদ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অবাক হয়ে দেখেন, সব ডাক্তারই মারা গেছেন।

আর স্তামাতিস? তিনি ৯০-এর কোঠা পার করে ফেলেছেন।

🍇 ব্লু জোনের গোপন রহস্য?

ইকারিয়ার জীবনধারা আসলে আমাদের শেখায় – সুস্থতা মানে শুধু ওষুধ না, বরং মানসিক শান্তি, সামাজিক সংযোগ, প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে থাকা।

স্তামাতিসের জীবন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আমরা কী হারিয়ে ফেলছি আধুনিক জীবনের যান্ত্রিকতায়।

ড্যান বিউটনার ও স্তামাতিস

ডাক্তার সাহেব যা বললেন

ব্লু জন (Blue Zones) এর আবিষ্কারক ড্যান বিউটনার (Dan Buettner) ইকারিয়া গিয়েছিলেন। এই দ্বীপে হাতে গোনা যে ক’জন ডাক্তার আছেন, বিউটনার তাঁদের একজনের সাথে কথা বলেন। তাঁর নাম ডঃ ইলিয়াস লেরিয়াডিস।

তাঁরা বসেছিলেন ডাক্তার লেরিয়াডিসের উইকেন্ড হাউযের উঠানে। টেবিলে ছিল কালামাতি অলিভ, হুমুস, ইকারিয়ার রুটি এবং মদ। ডাক্তার লেরিয়াডিস বলেন,

“এখানকার মানুষ অনেক দেরীতে ঘুমায়। আমরা ঘুম থেকে উঠি দেরী করে এবং সবসময় দুপুরে ঘুমাই। আমি আমার অফিস কখনই সকাল ১১টার আগে খুলি না কারণ এর আগে কেউ আসে না”। ওয়াইনের গ্লাসে একটি চুমুক দিয়ে তিনি বলেন,

“আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে এখানে কারো হাতেই ঘড়ি নেই? এখানে কোন ঘড়ি কাজ করে না। আপনি যদি কাউকে দুপুরে খেতে দাওয়াত দেন তাহ’লে সে আসবে হয় সকাল ১০টায় কিংবা সন্ধ্যা ৬টায়। আমরা ঘড়ি নিয়ে একদমই মাথা ঘামাই না।“

ডাক্তার তখন আঙ্গুলের ইশারায় কাছাকাছি সামোস নামে আরেকটি দ্বীপ দেখান।

“শুধু ১৫ কিলোমিটার দূরে ওটা একটি সম্পূর্ণ আলাদা জগৎ। তাঁরা আমাদের চেয়ে অনেক বেশী উন্নত। ওখানে আছে অসংখ্য উঁচু অট্রালিকা, রিসোর্ট এবং মিলিয়ন ডলার দামের বাড়ি। সামোসের মানুষজন টাকার পাগল। এখানে আমরা টাকা নিয়ে মাথা ঘামাই না। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আমরা সবাই মিলে টাকা সংগ্রহ করি এবং সেটা দিয়েই আমরা সবাই মিলে আনন্দ করি, যদি কিছু টাকা বেঁচে যায় তাহ’লে সেটা গরীবদের দিয়ে দেই।“

এ জায়গাটা ‘আমার’ নয় ‘আমাদের’।

✅ কী শিখলাম স্তামাতিসের গল্প থেকে?

শরীর নয়, মন আগে চিৎকার করে ওঠে – তাকে শুনতে হবে

কিমোথেরাপির চেয়ে কখনো কখনো বন্ধুর সঙ্গে বসে আঙুর খাওয়া বেশি কার্যকর

প্রকৃতি, স্নেহ আর সহজ জীবন জীবনকে বাড়িয়ে দিতে পারে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here